
নিজস্ব প্রতিবেদক
নৌকা পেলেই পাশ! সাধারণ মানুষের পোষণ করা এমন ধারণা নরসিংদীতে দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনের এ কথাটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে জেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকে ৬ জন এবং বাকি ৬ টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হওয়া ধারণাটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। সুন্দর ও সুষ্ঠু একটি নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সাধারণ ভোটাররা জেলা প্রশাসন পুলিশ প্রশাসনসহ নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানান। পাশাপাশি সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালনের জন্য জেলার সংবাদকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, সারাদেশের ন্যায় দ্বিতীয় ধাপে জেলার নরসিংদী সদর ও রায়পুরা এ দুটি উপজেলার ১২ টি ইউপির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরমধ্যে নরসিংদী সদর উপজেলার ২টি ও রায়পুরার ১০টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শুক্রবার ১২ নভেম্বর) নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশ করেছে রির্টানিং কর্মকর্তা। এতে নরসিংদী সদর উপজেলার ২টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত ২ প্রার্থী এবং রায়পুরা উপজেলার ৪ টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ও ৬টিতে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থীরা বেসরকারীভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিতরা হলেন:নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নে মোঃ দেলোয়ার হোসেন সরকার দিপু (নৌকা) ৮৭৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোঃ সাইফুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পান ৯৮২ ভোট।
চরদীঘলদী ইউনিয়নে মোঃ দেলোয়ার হোসেন নৌকা প্রতীক্র ৭৮১১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হাতপাখা প্রতীকে ৯৮০ ভোট পান।
রায়পুরা উপজেলার শ্রীনগর ইউনিয়নে রিয়াজ মোর্শেদ খান রাসেল (নৌকা) ৯৬০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটত প্রতিদ্বন্ধী আসাদুজ্জামান আযান (আনারস) পেয়েছেন ৪৩৩৫ ভোট। পাড়াতলীতে মোঃ ফেরদৌস কামাল (নৌকা) ৭৯৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী আব্দুল বারিক টেলিফোন প্রতীকে পান ২৫৩৮ ভোট। হাইরমারায় মো. কবির হোসেন (নৌকা) ৪০০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী মাহফুজুল হক বাবলা (চশমা) পেয়েছেন ৩৩২৮ ভোট। চরসুবুদ্ধিতে নাসির উদ্দিন (নৌকা) ৪৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী রোকনুজ্জামান সরকার (চশমা) পেয়েছেন ২৩১২ ভোট। এই ৪টি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়।
নিলক্ষায় আক্তারুজ্জামান (টেবিল ফ্যান) ৪৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী (আনারস) রাজিব আহমেদ পেয়েছেন ২৫৫৯ ভোট। আমিরগঞ্জে একেএম ফজলুল করিম ফারুক (আনারস) ৭৩৫৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ¦ন্ধী শাহানা বেগম (নৌকা) পেয়েছেন ৬৭৬২ ভোট। মির্জানগরে মো. বশির উদ্দিন সরকার রিপন (আনারস) ৩৯৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী মোঃ হুমায়ুন কবির সরকার (নৌকা) পেয়েছেন ৩০৬১ ভোট। চরমধুয়ায় আহসান সিকদার (চশমা প্রতিক) ৩১৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী মাইনুল ইসলাম তালুকদার (ঘোড়া) পেয়েছেন ১৯২৪ ভোট। বাঁশগাড়ীতে রাতুল হাসান (টেলিফোন) ৫৫৫২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী মো. আশরাফুল হক (নৌকা) পেয়েছেন ৫৯৭। মির্জারচরে জাফর ইকবাল মানিক (টেলিফোন) ২৩১৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন এবং মো. ফিরোজ মিয়া (নৌকা) পেয়েছেন ২২০৭ ভোট।
এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে একটি সুন্দর ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য নরসিংদী জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নির্বাচনকাজে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তর ও কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন এলাকার সাধারণ মানুষ।
সাধারণ ভোটাররা জানান, বিগত কয়েক বছরে এমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ সম্পূর্ণ হতে দেখিনি তারা। বিগত সময়ে অনেকে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেননি বলেও জানান।
শ্রীনগর ইউনিয়নের ভেলুয়ারচর গ্রামের জগতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট দিতে আসা ষাটোর্ধ্ব চাঁন বলেন, বিগত ৪০ বছরের মধ্যে আমাদের এই কেন্দ্রে এমন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে দেখিনি আমরা। সুন্দরভাবে ভোট দিতে পেরেছি এতেই লাখ লাখ শুকরিয়া।
এ সময় আসাদ মিয়া নামে ৪৫/৫০ বছরের এক মধ্য বয়সী ব্যক্তি এগিয়ে এসে বলেন, জগতপুর স্কুল কেন্দ্র আজ গত ৪০ বছরে রেকর্ড ভাঙছে। গত 40 বছরে এমন সুন্দর নির্বাচন দেশবাসী তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন আপনারা সাংবাদিকরা। আপনারা এখানে ছিলেন বলেই বিকাল ৪ পর্যন্ত ভোট চলে। নয় গত ৪০বছরে মধ্যে কেউ এই কেন্দ্রে ১০টা সাড়ে ১০টার পর আর ভোট দিতে পারেনি।
মির্জানগর ইউনিয়নের বাঙালীনগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোট দিয়ে ফেরার পথে আমিনুল ইসলাম নামে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ বলেন, এবারের মত এমন নজিরবিহীন ভোগ বিগত কয়েক বছরের মধ্যে দেখিনি।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply