
কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লার নাঙ্গলকোর্টে গ্যাস বেলুনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুসহ অন্তত ৪১ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচজনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে এই তথ্য জানিয়েছেন কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের চিকিৎসক মো. আসিফ ইমরান ।
আশঙ্কাজনক অবস্থায় যাদেরকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে তারা হলেন – সাইফুল ইসলাম, সাব্বির হোসেন, ইমন, বেলুন বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন ও আবদুর রব।
এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার মোকরা ইউনিয়নের বিরলী গ্রামে
বেলুন ফোলানোর কাজে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে শিশুসহ অন্তত ৪১ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এলাকাবাসী সুত্রে জানা যায়,, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের মোঘরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রতিবছর ১ মাঘ ঠাণ্ডাকালী মেলা অনুষ্ঠিত হয়। সে হিসাবে শনিবার সেখানে মেলা হওয়ার কথা। বিরুলী গ্রামের মৃত কালা মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন মেলায় গ্যাস বেলুনের ব্যবসা করেন। তার কাছ থেকে পাইকারি ক্রেতারাও বেলুন নিয়ে মেলায় বিক্রি করেন। তিনি মেলা উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে তাঁর বাড়িতে সিলিন্ডার থেকে বেলুনে গ্যাস ভরছিলেন। হঠাৎ সিলিন্ডারটি বিস্ফোরিত হয়ে উড়ে যায়। এতে পাশে ভিড় জমানো অন্তত ৪১ জন আহত হয়। আহতদের বেশির ভাগই শিশু।
প্রত্যক্ষদর্শী ও দুর্ঘটনায় আহত আলাউদ্দিন বলেন, প্রায় ২০০ বছর ধরে মেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এখানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ আসে। আমি আনোয়ার ভাইয়ের কাছ থেকে গ্যাস বেলুন নিয়ে মেলায় বিক্রি করি। ওইদিন বিকেলে গিয়েছিলাম কিছু বেলুন আনতে। এরই মধ্যে হঠাৎ বিস্ফোরণটি ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বাড়ি রক্তে লাল হয়ে যায়।
আনোয়ারের বোন ফারজানা আক্তার বলেন, আমার ভাই বেশ কয়েক বছর ধরে মেলায় পাইকারি বেলুন দিয়ে থাকে। নিজেও বেলুন বিক্রি করে। আমার ভাই ও তার ৬ বছরের মেয়ে মরিয়ম আক্তারের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এছাড়া পরিবারের বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে।
নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. দেবদাস দেব বলেন, বিস্ফোরণে আহত ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে কুমেক হাসপাতাল ও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছি। পাঁচ-ছয়জন অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি হয়েছে স্প্লিন্টার ইনজুরি। এ ছাড়া অনেকে ব্লাস্ট ইনজুরিতে আহত হয়েছে। অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে। অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমি কুমিল্লার সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলেছি। সবাইকে ভালোভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে অনেকে হাসপাতাল থেকে এসে বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা.মহিউদ্দিন বলেন, আমরা এরই মধ্যে অনেককে চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। গুরুতর আহত ১৭ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। আরও দুইজন রোগী নিজ দায়িত্বে সেখানে গেছেন। বাকিদের চিকিৎসা চলছে কুমেক হাসপাতালে।
হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মির্জা মুহাম্মদ তাইয়েবুল ইসলাম বলেন, বিস্ফোরণের পর সিলিন্ডারটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত হয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে। অনেকের শরীরে এক হাজারের বেশি স্প্লিন্টার প্রবেশ করেছে।
কুমিল্লা জেলা সিভিল সার্জন মীর মোবারক হোসাইন বলেন, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়াও কুমিল্লা সদর হাসপাতালে ৫ জন এবং নাঙ্গলকোট উপজেলা কমপ্লেক্স আরও ২ জন ভর্তি আছেন। সকলের চিকিৎসা ভালোভাবে চলছে।
নাঙ্গলকোট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাটির তদন্ত করছি। কিন্তু এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। তদন্তে সব বেরিয়ে আসবে।
এদিকে, বিস্ফোরণের ঘটনান কারণ জানতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে উপজেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লামইয়া সাইফুল এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নাঙ্গলকোট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আশরাফুল হক, নাঙ্গলকোট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাকিবুল ইসলাম ও উপজেলা ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মকর্তাকে নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে জানা যাবে এ দুর্ঘটনা কী কারণে হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply