নওগাঁ প্রতিনিধি
নওগাঁর আত্রাইয়ে ঐতিহ্যবাহী শীতাতলা মাছের মেলা।।উ পজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের জামগ্রামে তিনদিন ব্যাপী এ মেলা গত বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারী) থেকে শুরু হয়ে তা চলবে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত।
প্রকৃত একদিনের মেলা হলেও মেলার আগের দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু হয় এবং পৌষ মাসের শেষ দিন হয় পৌষ সংক্রান্তির মেলা পরের দিন বৌ মেলা হিসেবে কেনা বেঁচা হয়। প্রতি বছর এ মেলা পৌষ মাসের শেষ ও মাঘের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয়। মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় উপজেলার ভোঁপাড়া ইউনিয়নের জামগ্রাম মাঠে একটি বটগাছের নীচে।
যুগ যুগ ধরে সাজ সাজ রবে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। তবে এ বছর একটু ভিন্ন চিত্র। করোনা ভাইরাস কারনে মেলাতে উৎসুক জনতার বা মেলা দর্শনাথীদের আগমন অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে মাস্ক পরিহিত দর্শনাথীদের সংখ্যায় ও কম ছিল।
জনশ্রুতি রয়েছে কয়েক যুগ আগে নারায়ন চন্দ্র তার স্ত্রী শীতাকে জামগ্রামের এ মাঠে বনবাস দিয়ে ছিলেন। আর এ বনবাসে শীতা আশ্রয় নিয়েছিলেন এ বটগাছের নীচে। এখানে প্রাচীন যুগের একটি ইন্দরা (কুয়া) স্মৃতি হিসেবে আজও বিদ্যমান। আর এ ইন্দারায় (কুয়া) জ্বলে নাকি শীতা স্নান (গোসল) করতেন। তারই স্মরণে হিন্দু সম্প্রদায় পরবর্তীতে এই জামগ্রামে মেলা বসিয়ে পুঁজা অর্চনার মধ্য দিয়ে এই দিনটিকে স্মরন করে আসছে।
ইতোপূর্বে এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবব্ধ থাকলেও এখন এটি আর হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ মেলাতে এখন হিন্দু মুসলিম সকলেই অংশ গ্রহন করেন। এ ছাড়াও মেলাটি এ অঞ্চলে উৎসবে পরিনত হয়েছে।
মূলত এটা জামাই মেলা নামে প্রচলন শুরু হলেও মাছের মেলা বলেই সবার কাছে পরিচিতি পেয়েছে। মেলাকে ঘিরে এখনে দিনব্যাপী চলে আনন্দ উৎসব। এ ছাড়া মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকা জোড়ে আনন্দের বাতাস বইতে শুরু করেছে। এই মেলা যেন মেয়ে জামাই ও আত্নীয়-স্বজনসহ বন্ধু-বান্ধবদের মিলন মেলায় পরিনিত হয়।
জামগ্রাম সহ আশে-পাশের গ্রাম গুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই আপ্যায়িত অতিথিদের সন্মানে পিঠা-পুলি,মিঠাই- মিষ্টান্ন সহ রকমারী খাবারের ধুম পড়ে য়ায়। এবার তবে একটু ভিন্ন চিত্র। প্রতিটি বাড়িতে জামাই-মেয়ে ও আত্নীয় স্বজনদের আগমন কম দেখা গেছে। এই দিনটির জন্য সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন উপজেলাবাসী।
এ মেলায় আছে একের ভিতর দুই। এক কথায় রথ দেখা আর কলা বেঁচা। কারণ এটা জামাই মেলা হলেও এখানে বসে মাছের বিরাট মেলা। জামগ্রামের আশ-পাশের গ্রামে যারা বিয়ে করেছেন, সে সব জামাই হচ্ছে ওই মেলার মূল ক্রেতা ও দর্শনাথী। তা ছাড়া এই মেলাকে ঘিরে চলে এলাকার জামাইদের মধ্যে এক নীরব প্রতিযোগিতা। আর এই প্রতিযোগিতাটি হচ্ছে কোন জামাই সব চেয়ে বড় মাছটি কিনে শ্বশুর বাড়িতে নিয়ে যেতে পারে। একটা মাছকে ঘিরে ক্রেতা জামাইদের ভীষন জটলা।
মাছের নাম চিতল বিক্রেতা দাম হাঁকান বারো শ’ টাকা কেজি একটি মাছের ওজন প্রায় ছয়/শাত কেজি।
আজ শুক্রবার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জাম গ্রামের শীতাতলার মাছের মেলায় গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য।মেলায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন তো এসেছেন। এছাড়া পার্শ্ববতী জেলা বগুড়া, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট থেকে এ মেলা উপলক্ষেই আত্রাই জামগ্রাম শীতাতলার মেলায় এসেছেন।
এবারও মেলায় প্রায় শতাধিক মাছ ব্যবসায়ীরা বাহির থেকে মাছের পসরা সাজিয়ে বসেছেন।মেলায় মাছ ছাড়াও আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টান্ন ইত্যাদির দোকান বসেছে। মাছের মেলায় চিতল, কাতল, রুই, বোয়াল, সিলভারকাপ মাছসহ বিভিন্ন রকমের দেশীয় মাছের সমারাহ ঘটেছে।
জামগ্রাম শীতাতপ তলা মেলার আয়োজকরা জানান, এ মেলাটি প্রথম অনুষ্ঠিত হতো খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে। এটি অগ্রাহায়নের ধান কাটা শেষে পৌষ-সংক্রান্তি ও নবান্ন উৎসবে আয়োজন করা হতো। প্রায় এক শ’ বছর ধরে মেলাটি আয়োজন করা হচ্ছে। সময়ের সাথে সাথে এ মেলাটি একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে।
মেলার আয়োজক কমিটির সভাপতি বীর মুক্তি যোদ্ধা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জনান, বৃটিশ শাসনামল থেকে শুরু হওয়া জমগ্রামের শীতাতলার মেলা এখন ঐতিহ্যবাহী মেলা হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি নিয়েছে। এ মেলা আত্রাই উপজেলার সব চেয়ে বড় মেলা হিসেবে স্বীকৃত।
Leave a Reply