
ফলোআপ নিউজ
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘কান্না থামছে না ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ হওয়া যুবকদের স্বজনের’ এই শিরোনামে রবিবার (৬ মার্চ) জোনাকী টেলিভিশনের অনলাইন ভার্সনসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর মানবপাচারকারী চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। সোমবার (৭ মার্চ) রাতে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- রায়পুরা উপজেলার হাসনাবাদ এলাকার বাচ্চু মোল্লার ছেলে তারেক মোল্লা (৩০) এবং একই উপজেলার আগানগর এলাকার কালীপদ শীলের ছেলে সুবল চন্দ্র শীল (৪৫)।
পুলিশ জানায়, রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জের আগানগর গ্রামের পরিমল চন্দ্র শীলের ছেলে মনি চন্দ্র শীল (৩০) গত প্রায় ৫/৬ বছর যাবত লিবিয়া চাকুরি করে আসতেছিল। গ্রেফতারকৃত তারেক মোল্লা (৩০) ও তার বড় ভাই মামুন মোল্লা (৩৯) তাদের নিকট আত্নীয় স্বজনদের মাধ্যমে ইতালী নিয়ে যাবে বলে বিভিন্ন লোকের নিকট থেকে অর্থ আদায়সহ বিভিন্ন দেশে মানব পাচার করতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আমিরগঞ্জ ও এর আশপাশ এলাকার আশিষ সূত্র ধর (২১) আলামিন ফরাজী (৩০), নাদিম সরকার (২২) সহ আরো কয়েকজনকে বৈধ পথে ইতালী নেওয়ার কথা বলে ৮ লাখ থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকা মৌখিভাবে চুক্তি বদ্ধ হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তারেক মোল্লা ও মামুন মোল্লা (৩৯) দুইভাই মিলে আশিষ সূত্র ধরের পিতার বসত বাড়ী হতে ৬ লাখ টাকা গ্রহণ করে। বাকী ২ লাখ টাকা আশিষ ইতালী পৌছার পর তারেক মোল্লা তার পিতা অনিল সূত্রধর কাছ থেকে নিবে বলে জানায়।
একইভাবে ভিকটিম নাদিম সরকারের নিকট থেকে সাড়ে ৮ লাখ টাকায় মৌখিক চুক্তি বদ্ধ হয় এবং বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তারেক মোল্লা এবং মামুন মোল্লা সাড়ে ৬ টাকা নগদ গ্রহন করে। বাকী ২ লাখ টাকা ভিকটিম নাদিম সরকার ইতালী পৌছার পর তারেক মোল্লা গ্রহণ করবে মর্মে কথা হয়।
একইভাবে ভিকটিম আলামিন ফরাজী এর ভাই ইয়ামিন এর নিকট থেকে সাড়ে ৮ টাকায় মৌখিক চুক্তি বদ্ধ হয় এবং বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে সাড়ে ৬ টাকা নগদ গ্রহণ করে।
বিগত বছরে ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬ টার দিকে মানবপাচারকারী চক্রের সদস্য তারেক মোল্লা আশিষকে তার বাড়ী হতে নিয়ে ঢাকা বিমানবন্দর এর উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথে ঢাকার রামপুরা করোনা টেস্ট সম্পন্ন করেন। পরেরদিন (৩০ নভেম্বর) সকাল ৮টায় ঢাকা বিমানবন্দর হতে ইতালীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পরবর্তীতে আশিষ সূত্রধরকে বিবাদীরা ইতালী না পাঠিয়ে পরষ্পর যোগসাজসে প্রতারনা মূলকভাবে লিবিয়াতে প্রেরণ করে। লিবিয়া পৌছার পর হতে আশিষ সূত্র ধর লিবিয়া অবস্থান করতেছে বলে বিভিন্ন সময়ে তার পিতাকে মোবাইল ফোনে জানায়।
সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি সন্ধার পর হতে আশিষ সূত্রধরের সহিত মোবাইল ফোনে তার পিতার সাথে কোন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ছেলের সাথে যোগাযোগ করতে না পেরে তার সঠিক অবস্থান সম্পর্কে জানার জন্য তাদের জিজ্ঞসাবাদ করলে তার ছেলে ইতালী আছে বলে জানায় এবং অবশিষ্ঠ ২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
মানবপাচারকারীরা সংঘবদ্ধ ও পরষ্পর যোগসাজসে প্রতারনা মূলকভাবে আরো অর্থ আদায়ের লক্ষ্যে তার ছেলেকে বৈধ পথে ইতালী না পাঠিয়ে লিবিয়াতে আটক রেখেছে বা অন্য কোন দেশে পাচার করে। তারা প্রত্যেকেই আন্তর্জাতিক মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য ও সংঘবদ্ধ চক্র।
তারা ভিকটিম মোঃ আলামিন ফরাজী (৩০) এবং নাদিম সরকার (২২) দ্বয় সহ রায়পুরা থানা এলাকার আরো একাধিক ভিকিটমগণকে বিভিন্ন সময়ে একই কায়দায় ইতালীর কথা বলে লিবিয়া বা অন্য কোন দেশে পাচার করেছে বলে জানা যায়। জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), নরসিংদী মানব পাচারকারী এই চক্রকে সনাক্ত করে এবং মানব পাচারের সাথে জড়িত সকল আসামীদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
আসামিদের বিরুদ্ধে রায়পুরা থানায় মামলা রুজু করা হয়েছে।
এ জাতীয় আরো খবর..
Leave a Reply