কাঁচা ধানের ডগায় সন্তপর্ণে পা ফেলে নামছে বিকেলের রোদ। সাদা বকের নরম পালকের শব্দ আর সরু আলোপথের ঘাস ফুলের সৌরভ চারিদিকে বয়ে আনে মজা নেশার ঘ্রাণ। দূরের নীলিমা ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে রঙিন সোনালি চিকন হাসি। এসময় হালকা মাতাল মৃদুলয়ে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা বোরো ধানের রাঙ্গা হাসি। সবুজ ধানের পোয়াতি স্পর্শে থেকে এখন তরতর করে কাঁপছে ফসলের ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ জুড়ে এখন রূপালী ধান যেন দিগন্ত ছুঁয়ে নতুনের জাগরণে মেতে উঠেছে। আর বাম্পার ফলনে কৃষকদের প্রাণে বয়ে বেড়াচ্ছে চাঞ্চল্য, আগামী সুখের হাতছানি।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মাইজবন্ধ এর কৃষক ফজলুল হক জানান, আমাদের মাঠে কৃষকরা জিরাশাইল পারিজা ব্রিধান-২৮, ২৯, ৫০, ৬৪, হাইব্রিড-৫, এসিআই-৬, বলিয়া-২সহ প্রভৃতি জাতের ইরি-বোরা ধানচাষ করেছেন। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ তেমন একটা ছিলো না। যথাযথ পরিচর্যাসহ সময়মতো সার ব্যবহারে বাম্পার ফসল উৎপাদিত হয়েছে।
একই উপজেলার রাবান গ্রামের কৃষক সুকুমার দাসও বলেন, এ বছর খরা ও বন্যা তেমন ছিলো না। যে কারণে গত বছরের চাইতে এবার ফলন আরো ভাল হয়েছে। ক্ষেতের পরিচর্যা যেমন আগাছা নিড়ানি, মাটি কঁচলানি শেষে পরিমানমতো সার ও কিটনাশক প্রদান হয়েছে। আমাদের এলেকার প্রতিটি ইরি বোরো ক্ষেত এখন ধানের কঁচি শীষে পরিপূর্ণতা রূপ নিয়েছে। মাঠের দিকে চোখ পড়লেই মনটা ভরে যাচ্ছে।
তিনিও আরো বলেন, দেখতে দেখতে চৈত্র চলে যাবে। বৈশাখের মাঝামাঝি ধান পুরাপুরি পেকে উঠবে। আবহাওয়া চরম বৈরী না হলে তখন ধান কাটতে শুরু করবো। এখন থেকেই আমাদের পুরাপুরি প্রস্তুতি চলছে। ধান কাটার কামলা এলেকায় মিলেনা, তাই আমরা আগাম উত্তরাঞ্চলের মাঠ কামলাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তখন সব কাজ বাদ দিয়ে শুধু ধান কাটা, মাড়াই ও ঘরে তোলার জন্য প্রস্তুত আমরা। তখন মাঠ সাঁজবে কৃষকের ফলানো সোনার ধানের ছড়াছড়িতে। চারিদিকে ভেসে বেড়াবে ধান নাড়ার মজা মৌ মৌ গন্ধ।
পলাশ উপজেলা কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় হাই ব্রীড,উফশী সহ স্থানীয় বিভিন্ন জাতের ধান রোপণ করা হয়েছে। বোরো আবাদের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ১শ ৮২ হেক্টর জমি। এর মধ্যে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ১শ ৮০হেক্টর জমিতে। যা থেকে ১৭ হাজার ৪শ ৪১মেঃ টন ধান পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ স্থানীয় কৃষি অফিসের।
পলাশ পলাশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু নাদের এস এ সিদ্দিকী জানান, আমরা এবার বোরোধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি। ঘাম ঝরানো স্বপ্নের ফসল কিছু দিনের মধ্যেই ঘরে তুলে আনতে কৃষকদের আগাম প্রস্তুতি চলছে। আমাদের কৃষিসম্প্রসারন বিভাগ থেকে এবার কৃষকদের মাঝে পর্যাপ্ত কৃষি উপকরন, সার ও কিটনাশক সরবারহ করেছি। নিবির পরিচর্যায় বিনিময়ে এবার বোরোধানের ফলন অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে।
Leave a Reply