1. [email protected] : admi2019 :
  2. [email protected] : খুলনা বিভাগ : খুলনা বিভাগ
  3. [email protected] : News : Badol Badol
  4. [email protected] : Mostafa Khan : Mostafa Khan
  5. [email protected] : mahin : mahin khan
রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ০৫:০৪ পূর্বাহ্ন

দুর্নীতি ও অনিয়মের আঁতুড়ঘর নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিস

মনিরুজ্জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক:
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২২
  • ১৯৮ বার পঠিত

মনিরুজ্জামান, নিজস্ব প্রতিবেদক:

দুর্নীতি ও অনিয়মের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্টার অফিস। গত তিনমাস পূর্বে দূর্নীতির দায়ে সদর সাব-রেজিষ্ট্রার নিহার রঞ্জণ বিশ্বাস বরখাস্ত হওয়ার পর এ অফিসের দুর্নীতির পালে যেন সজীবতা ফিরে নতুন হাওয়া লেগেছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির কার্যকরি পরিষদের মেয়াদকাল শেষ হয়। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মেয়াধোত্তীর্ণ কার্যকরি পরিষদের কাউকে কিছু না জানিয়ে কোন সাধারণ সভা না ডেকে হঠাৎ ১১ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি উপহার দেন স্বঘোষিত জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নূরে আলম ভূঁইয়া। আর তার সাথী হিসেবে বেছে নিয়েছেন নিজেদের অফিসে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী শিবপুর দলিল লেখক সমিতির মুকুল ও পলাশ দলিল লেখক সমিতির সালাউদ্দিনকে।

জানা যায়, নূরে আলম ভূঁইয়া নিজের হাতকে শক্তিশালী করতে এবং সাধারণ দলিল লেখকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করতে প্রধান উপদেষ্টা করেছেন মানবিক মেয়র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুলকে। আর জামায়াতে ইসলামীর বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে নেতৃত্বদানকারী বিভিন্ন মামলায় কারাভোগকারী জহিরুল ইসলামকে আহবায়ক এবং নবীন সদস্য মামুন ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করে ৯০ দিনের জন্য কমিটি অনুমোদন করেন স্বঘোষিত জেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নূর আলম ভূঁইয়া।

এই কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, যুগ্ম আহবায়ক আবদুল্লাহ ইবনে রহিছ মিঠু, কার্যনির্বাহী সদস্যরা হলেন- আতাউর রহমান, আ: আজিজ, কবির হোসেন, আলী হোসেন , দেলোয়ার হোসেন, আনোয়ার হোসেন, মাহবুব হোসেন মামুন ও মোকলেছুল হক মানিক। দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের মধ্যে সুষ্ঠ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য এ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয় বলে জানা যায়।

সমিতির প্রধান উপদেষ্টা মানবিক মেয়র হিসেবে খেতাব প্রাপ্ত নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল পবিত্র ওমরা পালনে বর্তমানে সৌদি আরব অবস্থান করছেন। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে দলিল রেজিষ্ট্রির ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম চালু করেছেন নূর আলম ভূঁইয়া। সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসের অফিস সহায়কের কাছে জমা দানের পূর্বে সমিতিতে ২ হাজার টাকা জমা দিয়ে সিরিয়াল নিতে হয়। সমিতি থেকে সিরিয়াল নেওয়া না থাকলে অফিস সহায়ক বাছেদ তা প্রত্যাখান করে বলেন, “সিরিয়াল নিয়ে আসেন নতুবা দলিল রেজিষ্ট্রি হবেনা।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক দলিল লেখক বলেন, ‘ একটা দলিল রেজিষ্ট্রি করলে আমরা পারিশ্রমিক হিসেবে সর্বোচ্চ ২/৩ হাজার টাকা পেয়ে থাকি। সেখান থেকে বর্তমানে নূর আলম ভূঁইয়া সাহেবকে সমিতির নামে ২ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের চলা দায় হয়ে পড়েছে। দলিল লেখকরা অভিশাপ আর আর্তনাৎ করে বলেন, “ নূরে আলম ভূঁইয়ার নিদের্শে আমাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক দলিল প্রতি ২ হাজার টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। যা দিতে গিয়ে আমরা ঘরে খাবার নিতে পারছিনা।”

সমিতির কয়েকজন প্রবীণ দলিল লেখক বলেন, “উনি দামী গাড়ী, দামী বাড়ী, দামী পোশাক এবং মাস্তান পোষেণ। উনার কথার উপর কেউ কোন কথা বলার সাহস রাখে না। কিছু বলতে গেলে তিনি সনদ বাতিলের ভয় দেখান। দূর্নীতির দায়ে সদর সাব-রেজিষ্ট্রার নিহার রঞ্জণ বিশ্বাস গত ৩ মাস পূর্বে বরখাস্ত হন। এখন জুলুমবাজ ভূঁইয়ার বরখাস্তের অপেক্ষায় আছি। আমরা উপর ওয়ালার কাছে বিচার দাবী করছি। যেন আমাদেরকে এই জুলুমবাজের হাত থেকে রক্ষা করেন।”

এসময় দলিল করতে আসা এক ব্যক্তি অনেকটা উৎসাহী হয়ে তার দলিল লেখককে জিজ্ঞেস করেন আচ্ছা আপনাদের অফিসে প্রতিদিন কতগুলো দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। জবাবে ওই দলিল লেখক জানান , কম করে হলেও প্রতিদিন প্রায় ১০০টি দলিল রেজিষ্ট্রি হয়। এই কথাশুনে দলিল করতে আসা ওই ব্যক্তি বলে উঠেন , মানুষ কোটি টাকা বিনিযোগ করে দৈনিক ২০ হাজার টাকা ব্যবসা (আয়) করতে পারে না। আর আপনারা বিনা পূঁজিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২ লাখ টাকার উপরে আয় করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দলিল লেখক বলেন, “১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে লুঙ্গি গামছা পড়ে এদেশের আপামর জনগণ দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধ করে বহু জীবন আর মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এদেশের স্বাধীনতা। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে যে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন আজ তারই কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে সেই লক্ষ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে দেশ। স্বাধীনতার এতবছর পর জাতীয় পার্টি থেকে আসা নেতা নূরে আলম ভূঁইয়া দলীয় নেতাদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোথায় স্বাধীনতা? কোথায় মুক্তি? আজ তার হাতে আমাদের মত সাধারণ দলিল লেখকদের স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে।

নরসিংদী সদর দলিল লেখক সমিতির সদস্যদের প্রতি হওয়া এ অনিয়ম অত্যাচার ও জুলুমের বিষয়টি আমলে নিয়ে বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে একজন জুলুমবাজ নূরে-আলম ভূঁইয়াকে বরখাস্ত করে নরসিংদী সদর সাব-রেজিষ্টার অফিসকে কলঙ্কমুক্ত করার আহবান জানাচ্ছি।

এব্যাপারে কমিটির সদস্য সচিব মামুন ভূঁইয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি ফোনে কোন কথা বলবো না প্রয়োজন হলে আপনি অফিসে আসেন বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এব্যাপারে কমিটির আহবায়ক জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “সামনে ঈদ, তাছাড়া করোনার জন্য দীর্ঘদিন অফিস বন্ধ ছিল। ফান্ডে টাকা পয়সা নাই। রোজার মাস বুঝেনইতো সদস্যদের বোনাসের বিষয় আছে। সমিতির বিভিন্ন খরচ ও ঈদ বোনাসের প্রয়োজনে এ চাঁদা সংগ্রহ করছি।” তিনি আরও বলেন, আগে সমিতির টাকা জমা নিত শফিক। আর এখন নেয় আনোয়ার। শফিক আমাদের টাকা-পয়সা বুঝিয়ে দিয়ে যায়নি।

শফিক যদি সমিতির টাকা নয়-ছয় করে থাকে তবে তাকে ধরে এনে তার কাছ থেকে সমিতির টাকার হিসেব নেওয়া হচ্ছে না কেন জানতে চাইলে উত্তরে আমতা আমতা করে বলেন, নিব নিব।

এবিষয়ে কথা বলতে কেন্দ্রিয় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি নরসিংদীর দলিল লেখকদের অভিভাবক নূরে আলম ভূঁইয়ার মুঠোফোনে একাধিবার ফোন করলেও তিনি তা রিসিভ করেন নি ফলে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..