নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
মাধবদীতে সহোদর দুই বড় ভাইয়ের অত্যাচারে পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে বিগত ১৫ বৎসর ধরে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন মোস্তফা মিয়া নামে এক অসহায় পিতা ।
ভুক্তভোগী মোস্তফা মাধবদী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত জয়নাল আবেদীন ওরফে জানু মেম্বারের ছেলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জয়নাল আবেদীন ওরফে জানু মেম্বার বিগত ২০০১ ইং সনে ৩ জন স্ত্রী,৭ জন মেয়ে ও ৮ জন ছেলে সহ মোট ১৮ জন ওয়ারিশের বিপরীতে ১১ শতাংশ জমি ও মাধবদী বাজারে কয়েকটি দোকান ঘর রেখে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই প্রথম সংসারের বড় ছেলে শাহিন মাহমুদ ও মেজো ছেলে সেলিম দু’জন মিলে জানু মেম্বারের মাধবদী বাজারস্থ দোকান ঘর সমূহ দখলে নিয়ে নেয়। এরপর তাদের নজর পড়ে বাড়ির দিকে। তারা তাদের সৎ মা ও সৎ ভাই-বোনদের সম্পত্তি দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে। তাদের বাড়ি থেকে বিতাড়িত করতে বিভিন্ন হামলা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে থাকে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পরবর্তীতে মেয়র ও কাউন্সিলরদের মধ্যস্থতায় বহুবার আপোষ মীমাংসার চেষ্টা করলেও শাহিন ও সেলিমের অসহযোগিতায় তা সম্ভব হয়নি। বাধ্য হয়ে দু’একজনে তাদের প্রাপ্য অংশ শাহিনের সহোদর মোস্তফার কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে করে শাহিন এবং সেলিম ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তফা এবং তার স্ত্রীর উপর একাধিকবার হামলা চালায়। এতেও তারা সফল হতে না পেরে মোস্তফা এবং তার স্ত্রীকে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করায় বিগত ১৫ বৎসর ধরে মোস্তফা তার পৈতৃক ভিটেমাটি ছেড়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভাড়া থাকেন।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করলে মোস্তফা প্রতিবেদককে বলেন, আমার আপন বড় ভাই শাহিন মাহমুদ ও সেলিমের অত্যাচারে জর্জরিত হয়ে বিগত ১৫ বৎসর ধরে নিজের ঘর বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকি। আমার দুইজন ছেলে এবং দুইজন মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করছি। তারা আমাদের বাজারের ঘর দখল করাসহ আমার পৈতৃক সম্পত্তির প্রাপ্ত অংশ জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। আমি তৎকালীন পৌর প্রশাসক ইঞ্জিনিয়ার শওকত আলী, সাবেক মেয়র সফিউদ্দিন আহমেদ সাফি, মো.ইলিয়াস এবং বর্তমান মেয়র হাজী মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিকসহ এলাকার গণ্যমান্য সকলের কাছেই আমার প্রাপ্য অংশ পাওয়ার জন্য ঘুরেছি । তারা সকলেই আমার ভাইদের কে আমার অংশ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন কিন্তু তারা কারোর কথাই রাখেনি।
বরং আমার উপর তাদের অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমার পৈতৃক ওয়ারিশের অংশ ছাড়াও আমার আরো এক বোন ও দুই ভাইয়ের অংশ ক্রয় করেছি। বর্তমানে বাড়িতে অন্যান্য ভাইবোনদের চেয়ে আমার জমির পরিমাণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও আমি বাড়ি ছেড়ে থাকতে হয়। তারা আমার সৎ মা এবং ভাই-বোনদেরকে দিয়ে আমার ক্রয়কৃত জমি ও দখল করিয়ে রেখেছে। আমার ছেলেমেরা বিয়ের উপযুক্ত হওয়া সত্ত্বেও বাড়িঘরের অভাবে ভালো জায়গায় বিয়ে দিতে পারছি না। আমি ছেলে মেয়ে ও পরিবার পরিজন নিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবন-যাপন করছি। বর্তমান সময়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যসহ সকল কিছুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবারের ভরণপোষণ করে বাসা ভাড়ার টাকা পরিশোধ করতে আমাকে হিমশিম খেতে হয় বিধায় আপনাদের শরনাপন্ন হয়েছি। আমি আমার পাওনা অংশ বুঝে পেতে সকল ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক ভাইসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করি।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী মোস্তফার ভাইদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তাদের উপর আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মোস্তফা অবৈধভাবে পৌরসভার ভেকু মেশিন দিয়ে আমাদের সৎ মায়ের ঘর ভেঙ্গে দেয়।
এতে আমরা তাকে বাধা দেওয়ায় সে আমাদেরকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। সে এবং তার স্ত্রী মিলে আমাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রাননাশের হুমকি দেয়াসহ ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। এঘটনায় তারা মাধবদী থানায় পৃথক পৃথক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে ও জানান তারা।
Leave a Reply