নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয়ে ডিলারের বিরুদ্ধে চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগ দাখিল করেন তালিকায় নাম আছে এমন কয়েকজন। নরসিংদী সদর উপজেলার পাইকারচর ইউনিয়নের ১, ২, ৩, ৪ ও ৫ নং ওয়ার্ডের ডিলার আব্দুল মজিদ মিয়ার বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেন ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা এবাদুল্লাহ ও গিয়াস উদ্দিন। গত ১৭ মে তারা পৃথক দু’টি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
পরবর্তীতে গতকাল সোমবার (১ জুন) বিকেলে স্থানীয় সাংবাদিক স্মরণাপন্ন হয়ে এ বিষয়টি মৌখিকভাবে অবহিত করেন এবং অভিযোগের , তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির ও জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটো কপি প্রদান করেন। এসময় তাদের সাথে তালিকায় নাম আছে কিন্তু কার্ড কিংবা চাল পায়নি এমন বেশ কয়েক জন সুবিদা বঞ্চিতও স্ব-শরিরে উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগে বলা হয় সুবিদা বঞ্চিত এবাদুল্লাহ ও গিয়াস উদ্দিন ওই ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে গত চার বছর সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিতরণের তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগের এক নেতার কাছে প্রযোজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। ২০১৬ সাথে চালু হওয়া খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির তালিকায় তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত হলেও এলাকার ডিলার আব্দুল মজিদ মিয়া চাল উত্তোলনের জন্য তাদেরকে কোন কার্ড প্রদান করে নাই এবং ১০ টাক কেজি দরে চাল দেয়নি।। কার্ডের জন্য ডিলারের কাছে কয়েক দফা গেলে তাদের নামে কোন কার্ড আসে নাই বলে তিনি সাফ জানিয়ে দেন। এমনকি ডিলারের কাছে তালিকাটি দেখতে চাইলে তাও তিনি দেখায়নি। সম্প্রতি ভুক্তভোগি এবাদুল্লাহ ও গিয়াস উদ্দিনসহ এলাকার আরো বেশ কয়েকজন সুবিদা বঞ্চিত ব্যক্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যলয় থেকে তালিকার কপি উত্তোলন করেন। উত্তোলনকৃত তালিকার ৫৮৭ নাম্বার সিরিয়ালে এবাদুল্লাহ পিতা মৃত সাজন মিয়া এবং ৫৩১ নং সিরিয়ালে মো: গিয়াস উদ্দিন পিতা শাহাদুদ্দিন এর নাম অন্তর্ভুক্ত আছে তা দেখতে পান। পরবর্তীতে ডিলারের কাছে গেলে তাদের নামে কোন কার্ডই তিনি পাননি বলে জানান। ডিলারের কাছ থেকে প্রত্যাহিত হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগ করেন।
অভিযোগকারী এবায়দুল্লাহ জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করার পর কোন সুফল পায় কিনা তা কয়েকদিন দেখেন তারা। কিন্তু ১৫ দিনের অধিক সময় গত হওয়ার পরেও কোন সুফল না পাওয়ায় তারা সমকাল জেলা প্রতিনিধির স্মরণাপন্ন হন।
এসময় অপর অভিযোগকারী মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অভাবের তাড়নায় তালিকায় নাম দেই। আমার নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলেও গত চার বছর যাবৎ কোন কার্ড কিংবা চাল পাইনি। যারা আমাকে আমার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেছে আমি তাদের বিচার চাই।
তালিকায় নাম আছে সিরিয়ল নাম্বার ৩৩, ওই ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মো: মাইন উদ্দিন পিতা নেওয়াজ আলী, সিরিয়ল নাম্বার ৪৩ শাহিন মোল্লা পিতা জলিল মোল্লা একই অভিযোগ করেন। তারা জানায় পুরো ইউনিয়নে ১৫ শ’ এর অধিক লোকের নাম তালিকায় থাকলেও ডিলার মজিদ মিয়ার অধিনে তালিকাভুক্ত ৭৪৮ জন।তার মধ্যে এলাকায় প্রায় শতাধিক লোক, যাদের তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত আছে কিন্তু গত চার বছর যাবৎ কোন কার্ড কিংবা চাল পায়নি।
অভিযোগকারীরা জানায় ডিলার আব্দুল মজিদ মিয়ার পাইকারচর ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হবার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হত দরিদ্র ও দুস্থ শতাধিক মানুষের চাল আত্মসাৎ করছেন ওই ডিলার।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ডিলার আব্দুল মজিদের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, অভিযোগকারীরা তাদের কার্ড হারিয়ে ফেলেছে। আমাকে সামাজিকভাবে হেয় পতিপন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে একটি মহল।
পাইকারচর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল হাশেম জানান, এব্যাপারে কোন সুবিদা বঞ্চিতই তাকে কিছু জানায়নি বা তার কাছে কোন অভিযোগ করেননি।
নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে, এ বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করেছি । উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
পরে উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো: আশরাফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে জানান, তিনি অসুস্থ. ইতোমধ্যে করোনা পরিক্ষার জন্য নমুনা দিয়েছেন। এখনও ফলাফল পাননি। ফলাফল নেগেটিভ হলে যত দ্রুত সম্ভব তদন্তের কাজ শুরু করবেন।
জোনাকি টেলিভিশন/এসএইচআর/০৩-০৬-২০ইং
Leave a Reply