স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার দেশে নতুন করে ৩ হাজার ৮০৩ জনের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এতে দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাখ অতিক্রম করেছে। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন।
দেশে করোনা শনাক্তের হিসেব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই এক লাখের মধ্যে শুধু মাত্র জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনে আক্রান্ত ৫৫ হাজার ১৩৯ জন। দেশে প্রথম করোনা রোগি সনাক্ত হওয়ার গতকাল ১৮ জুন ছিল ১০৩ তম দিন। সে হিসেবে বাকী ৮৫ দিনে আক্রান্ত হয়েছে মোট শনাক্তের অর্ধেকেরও কম অর্থাৎ ৪৭ হাজার ১৯৩ জন।
অপরদিকে দেশে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যূবরণ করেছেন এক হাজার ৩৪৩ জন। তার মধ্যে জুন মাসের ১৮ দিনে মৃত্যূ হয় ৬৯৩ জন, যা মোট মৃত্যূর অর্ধেকেরও বেশী।
এছাড়াও দেশে এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪০ হাজার ১৬৪ জন। এর মধ্যে জুন মাসের প্রথম ১৮ দিনে সুস্থ হয় ৩০ হাজার ৩৮৩ জন। যা মোট সুস্থতের প্রায় ৭৬ শতাংশ।
করোনার সার্বক্ষণিক তথ্য রাখা জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহস্পতিবার রাতের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, করোনার আক্রান্তের সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ১৭ তম। প্রতিবেশি ভারত ও পাকিস্তান বাংলাদেশের উপরে। আক্রান্তের সংখ্যায় বিশ্বে ভারত এখন চতুর্থ। সেখানে মোট আক্রান্ত তিন লাখ ৬৬ হাজার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। সংক্রমণের ৩৮ দিনের মাথায় এক হাজার এবং ৫৮ দিনের মাথায় ১০ হাজার পার করে বাংলাদেশ।
তবে প্রথম ১০ হাজার করতে ৫৮ দিন লাগলেও পরের ১০ হাজার শনাক্ত হয় মাত্র ১১ দিনেই। এরপরে তা আরও কমে আসে। ৭ দিন, ৬ দিন ও ৫ দিনে ১০ হাজার করে শনাক্ত হতে থাকে। সর্বশেষ ১০ হাজার পার হয়েছে মাত্র তিন দিনে। তবে জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করছেন, পরীক্ষা বাড়লে আরও কম সময়ে বেশি ব্যক্তির করোনা শনাক্ত করা সম্ভব।
জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, লাখ পেরোনোর পর অধিকাংশ দেশেই শনাক্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ১০ জন রোগী যতজনকে আক্রান্ত করতে পারবে, ৫০ জন তার চেয়ে অনেক বেশি পারবে। ফলে চক্রবৃদ্ধি হারে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন বুলেটিনে অংশ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আগামী দুই থেকে তিন বছর বা তারও বেশি দিন থাকবে। তবে এই সময়ে সংক্রমণের মাত্রা উচ্চহারে নাও থাকতে পারে।
ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাংলাদেশ একটি জনবহুল ও অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। করোনাভাইরাসও অত্যন্ত ছোঁয়াচে ভাইরাস। এ কারণে অসতর্ক চলাফেরা ও স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে না চললে সংক্রমণের হার মোকাবিলা করা কঠিন।
এদিকে দীর্ঘদিন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখলে কর্মহীনতা, আয় রোজগারের পথ বন্ধ হওয়াসহ অন্যান্য সামাজিক-অর্থনৈতিক কারণেও ব্যাপক অপুষ্টিজনিত রোগবালাইয়ে অনেক মৃত্যু ঘটতে পারে। সে কারণে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষায় সরকারকে কাজ করতে হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৩৮ জনের। এ নিয়ে দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৩৪৩ জনের মৃত্যু হলো।
জোনাকী টেলিভিশন/এসএইচআর/১৯-০৬-২০ইং
Leave a Reply