নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীতে জাতীয়তাবাদী যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষনার পর পুরো জেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় বইছে। দলটি একটি গ্রুপ এই কমিটি বিরোধীতা করে, কমিটির নামে অর্থ বানিজ্য, সজনপ্রীতি, আত্মীয়করন, প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্তিসহ সক্রিয় কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ তুলেছে। এ নিয়ে দলের সিনিয়র সহ সভাপতির শাহান শাহ সানুর ফেইসবুকে দেয়া একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়ে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ১ জুন সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, সহ সভাপতি শাহান শাহ সানু, সাধারন সম্পাদক হাসান উজ জামান সরকার, যুগ্ম সাধারন সম্পাদক দিদার হোসেন ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোকাররম ভূঁইয়ার নাম উল্লেখ করে একটি কমিটির অনুমোদন দেয় দলটির কেন্দ্রিয় সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। ওইদিনই ৩০ দিনের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে এই পাঁচজনকে তা অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশনা পত্র দেন দলটির কেন্দ্রিয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কমিটি গঠনের ব্যর্থ হয় দায়িত্ব প্রাপ্ত এই পাঁচ নেতা। দলীয় গঠনতন্ত্র কোন একটি কমিটির মেয়াদকাল ২ বছর দীর্ঘায়িত হয়। বর্তমানে এই কমিটির মেয়াদকাল ২ বছর ২ মাস পূর্ণ হয়েছে। দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কমিটির মেয়াদ ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।যা অটো নিস্ক্রিয় হওয়ার বিধান থাকলেও নিয়মবর্হিভূত ভাবে কমিটির দায়িত্ব প্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ২ বছরেরও অধিককাল পরে ২০১ কমিটি বিশিষ্ট একটি মনগড়া তালিকা প্রস্তুত করে অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রে পাঠায়। কেন্দ্রিয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এতকিছু চিন্তা-ভাবনা করেই গত ২৫ জুলাই তা অনুমোদন দেয়।
দলের সিনিয়র সহ সভাপতি শাহান শাহ সানুর ৩০ জুলাই তার ফেইজবুক পেইজে দেয়া স্ট্যাটাসে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে যারা মাঠে সক্রিয় থেকে কাজ করে গেছেন তাদের এই বঞ্চিত করায় পরিবারতন্ত্র ও সাংগঠনিক অবিচার প্রতিষ্ঠা করার রাজনৈতিক নোংরামি বলে উল্লেখ করেন।
স্ট্যাটাসে বলা হয় নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ আত্মীয়করণের মাধ্যমে তার ছোট ভাই এডঃ আল আমিন হোসেন বিপ্লবকে ৫ নং সহ সভাপতি পদে পদায়িত করেন। শুধু তাই নয় দ্বিতীয়ত সহ সাধারন-সম্পাদক হিসাবে কমিটিতে পদায়িত করেছেন তার বোনের ছেলে মনোয়ার হোসেন ছোটনকে। যে কিনা দীর্ঘ সময় প্রবাসে অবস্থান করছেন। এছাড়াও হুমায়ন সনি যাকে সহ-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক পদে পদায়িত করা হয়েছে সেও দিন যাবৎ প্রবাসে অবস্থান করছেন। নরসিংদীতে বিএনপির রাজনীতির সাথে কোনো ভাবেই সম্পৃক্ত নন বলে দাবী করেছেন নজরুল ইসলাম গাজী নামে এক ব্যক্তি। যে কিনা বলেছেন তাকে বিএনপির কোন সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রাখলে তা হবে বিএনপির দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। সেই নজরুল ইসলাম গাজীকে রাখা হয়েছে নরসিংদী জেলা যুবদলের কমিটির এক নাম্বার সদস্য হিসেবে।অথচ নরসিংদী সরকারী কলেজ ছাত্রসংসদের সাবেক ভি,পি নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, নরসিংদী জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক ইলিয়াস আলী ভূঁইয়াকে করা হয়েছে বঞ্চিত। তাকে সদস্য পদেও রাখা হয়নি। লিয়াকত আলী টিটু দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের একজন পরিক্ষীত সৈনিক। রাজপথের সকল আন্দোলনে সক্রিয় ভুমিকা রাখা লিয়াকত আলী টিটুকে করা হয়েছে বঞ্চিত। তাকেও কোন পদে রাখা হয়নি। এছাড়াও বঞ্চিত করা হয়েছে রাজপথে অপর এক লড়াকু সৈনিক বেলাব উপজেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক মাসুদ রানাকেও। বর্তমান সময়ের এমন কোন আন্দোলন সংগ্রাম নেই যাতে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। অথচ নরসিংদী জেলা যুবদলের ১১ নং সহ সভাপতি হিসাবে রেখেছেন ফরহাদ চৌধুরী ও ১২ নং যুগ্ম সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেন মিকোয়ান বিগত এক যুগের বেশী সময় ধরে নিস্ক্রিয় প্রায়। তাদেরকে এতোবছর কোন আন্দোলন সংগ্রামে দেখে যায়নি। অথচ তাদেরকেই দলের দুটি মূল্যবান পদে পদায়িত করা হয়েছে।
এছাড়াও নরসিংদী সরকারী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এ,জি,এস নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক,নরসিংদী জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সাধারন সম্পাদক,শহর সেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মাহমুদ হাসান চৌধুরী সুমনকে ১৩ নাম্বার সহ সভাপতি হিসাবে রাখা হয়েছে। অথচ তার উপরের সারিতে থাকা অন্য নেতাদের চেয়ে তার যোগ্যতা অনেকাংশেই বেশী। ফলে তার যোগ্যতাকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে বলে শাহান শাহ সানু তার স্ট্যাটাসে উল্লেখ।
এব্যাপারে শাহান শাহ সানুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জোনাকি টেলিভিশনকে বলেন, নরসিংদী জেলা যুবদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য দলীয় পদে থাকা আমাদের অন্য তিনজনের মতামত না নিয়েই রাজনীতির নামে দলীয় পদ বানিজ্য, স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে এই কমিটি গঠন করেন।
তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবে আমাদের এই কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হলেও বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে জেলা কমিটি থেকে প্রেরিত নামের তালিকা পূর্ণাঙ্গ কমিটি হিসেবে অনুমোদন দেন কেন্দ্রিয় যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।
তিনি আরও বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০১ কিংবা ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের বিধান থাকলে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যক্তিগত স্বার্থে তা দীর্ঘায়িত করা হয়েছে।যা সম্পূন্ন নিয়ম বর্হিভুত।
শাহান শাহ সানুর সাথে সাথে এই কমিটির বিরোধীতা করেন দলের অপর দুইজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিদার হোসেন ভূঁইয়া ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোকাররম ভূঁইয়ার। তারাও একমিটিকে স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়করণ, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও দূর্নীতির কমিটি বলে আখ্যা দেন।
নরসিংদী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসান উজ জামান সরকারের সাথে যোগাযোগের জন্য তার ০১৭৪০৯১৭৫৮৮ এই মোবাইল নাম্বারে বেশ কয়েকবার ফোন দিলে তিনি রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দলীয় পদে থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসটি সংগঠনের সাংবিধানিক পরিপন্থি।কমিটি গঠনের ব্যাপারে স্ট্যাটাসে যে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে তা ভিত্তিহীন। এগুলো মিথ্যে ও বানোয়াট। কমিটির অনুমোদ দেন কেন্দ্রিয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। আমরা সুপারিশ করতে পারি মাত্র।
স্ট্যাটাসে উল্লেখিত বিষয়গুলো ভিত্তিহীন হয়ে থাকলে, জেলা বিএনপির সভাপতিকে কমিটি সংশোধন করা হবে বলে কেন তারা তা জানিয়েছেন এ প্রশ্নের জবাবে মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ বলেন, বিষয়টি শুধু মাত্র বেলাব উপজেলা সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা ও লিয়াকত আলী টিটুর বিষয়টি সংশোধনের কথা বলেছি। লিয়াকত আলী টিটুর বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। কেন্দ্রিয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই তাকে কোন পদে রাখেনি। তবে প্রবাসীদের বিষয়ে তিনি কোন কথাই বলেননি।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকন জোনাকি টেলিভিশনকে বলেন, বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। কমিটি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা সত্যিই দু:খজনক। তবে অনুমোদনকৃত কমিটি সংশোধন করা হবে বলে সময় নিয়েছে। আগে দেখি কতটুকু কি সংশোধন করে তারা।
জোনাকী টেলিভিশন/এসএইচআর/৪ আগস্ট ২০২০ইং
Leave a Reply