নিজস্ব প্রতিবেদক
নরসিংদীর পলাশে আধুনিক নগরানের পাশাপাশি ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে ইটভাটা। উপজেলার অর্ধশতাধিক ভাটা অধিকাংশগুলোতে ইট তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। কৃষি জমি থেকে অবাদে মাটি কাটার ফলে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে ফসলের আবাদ অন্যদিকে মাটি আনা নেওয়ায় ব্যবহৃত ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক।
পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজিচর গ্রামে কৃষি জমিতে গড়ে উঠা মেসার্স একতা ব্রিকফিল্ডের পাশে ভ্যাকু লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গর্ত করে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। আর এসব মাটি কয়েক মিনিট পর পর ট্রাক্টর ভরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আশেপাশের ইটভাটা গুলোতে।
শুধু কাজিচর গ্রামই নয়, এমন দৃশ্য এই ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম গুলোতেই।
স্থানীয়রা জানান, ডাঙ্গা ইউনিয়নে রয়েছে ১৭টি ইটের ভাটা। যার একটিতেও নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে গড়ে উঠা এসব ইট ভাটায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও আশপাশের পরিবেশ।
শুধু ফসলি জমিই নষ্ট নয়, এসব ইটের ভাটায় মাটি আনা নেওয়ায় ব্যবহৃত ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচলে এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলো পরিনত হয়েছে খানাখন্দে, ধূলাবালিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে এখানকার সাধারণ মানুষ।
কাজীর চর গ্রামের একাধিক বাসিন্দা জানান, ওই গ্রামে অধিকাংশ ফসলি জমি এখন চাষবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের কৃষি জমিতে গড়ে উঠা ইটভাটা গুলোতে ফসলি জমির মাটি কেটে নিয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। ভাটার মালিকরা এককালীন টাকার লোভ দেখিয়ে কৃষকদের জমির মাটি বিক্রি করতে উৎসাহিত করছে। এতে করে অনেক কৃষক জমিতে ফসল চাষাবাদ না করে মাটি বিক্রি করে দিচ্ছে।
এদিকে ভাটার মালিকরা জমিতে একাধিক ভ্যাকু মেশিন লাগিয়ে ৩০ থেকে ৪০ ফুট গর্ত করে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে। ফলে পাশের জমিগুলোও মাটি ভেঙে পড়ছে ওই গর্তে। চাষাবাদের ইচ্ছা থাকা শর্তেও জমির মাটি ভেঙে পড়ায় ফসলে আবাদ করতে পাচ্ছেনা তারা। ফলে বাধ্য হয়ে মাটি বিক্রি করতে হচ্ছে তাদেরকেও।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ডাঙ্গা ইউনিয়নের অধিকাংশ ইট ভাটার মালিক জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক ব্যক্তি হওয়ায় তাদের ভয়ে এলাকার সাধারণ কৃষক প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। প্রতিবাদ করতে গেলে ভয়ভীতিসহ মারধরের শিকার হতে হয়। শুধু ইটভাটা নয় ভাটার মালিকদের রয়েছে কয়েকশত ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টর দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মানুষের চলাচলরত গ্রামীণ সড়কগুলো দিয়ে মাটি আনা নেওয়া করা হয়। ফলে ইউনিয়নের ৭০ শতাংশ সড়কেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সড়কজুড়ে খানাখন্দে সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে ভাটার মালিকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি।
এদিকে ইউনিয়ন জুড়ে গড়ে উঠা অসংখ্য ইটভাটায় বেপরোয়া ট্রাক্টর চলাচলে ক্ষতির কথা স্বীকার করে ডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সাবের উল হাই বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সবচেয়ে বড় বাধাঁ অত্যাধিক ইটভাটা ও বেপরোয়া ট্রাক্টর।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ সড়ক গুলো নির্মাণ করার কয়েক মাসের মধ্যে তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ইট ভাটায় ব্যহৃত ট্রাক্টরের কারণে। এসব নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের জোড়ালো ভূমিকার দাবিও জানান তিনি।
পলাশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা ইয়াসমিন জানান, ইটভাটা গুলোর অনুমোদনের বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে, খুব শীঘ্রই প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply