নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদীর শিবপুরে ছাত্রলীগের সভাপতিকে গালমন্দ করার ফোনালাপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সর্বত্র এখন ভাইরাল শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশীদ খান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার ফোনালাপ। পুরো উপজেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফটিক মাস্টারের স্মরণসভায় উপস্থিত না হওয়ায় ছাত্রলীগের সভাপতি রানার উপর হামলা চালিয়ে তাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
ছাত্রলীগের সভাপতির অভিযোগ, অসুস্থতার করেন স্মরণসভায় উপস্থিত থাকতে না পারায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির সন্ত্রাসীরা তাকে এলোপাতাড়ি মারপিট করেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হারুনুর রশিদ খান।
জানা যায়, ২৭ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান ফটিক মাস্টারের ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সকালে মরহুমের কবরে ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে উপজেলা আওয়ামী লীগ।
এ অনুষ্ঠানে শিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানাকে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। কিন্তু তিনি সকালে অনুষ্ঠানে উপস্থিত না হয়ে বিকেলে সাবেক স্বতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ব্যক্তিগত কর্মসূচিতে অংশ নেন। বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি।
ওইদিন সন্ধ্যা ৭টার ২২ মিনিটে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছাত্রলীগের সভাপতির ফোনে ফোন করে গালমন্দ করেন। এর একদিন পর রবিবার দুপরে শিবপুর কলেজ গেইট কাঁচাবাজার এলাকায় সোহেলের উপর হামলা চালানো হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করা হয়। পরে আহতবস্থায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার দুপুরে সোহেল রানা ফেসবুক ওয়ালে দুই নেতার ফোনালাপের রেকর্ডসহ স্যাটাস দেন। মুহূর্তের মধ্যেই বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
শিবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা অভিযোগ করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমাকে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির ১ম মৃত্যুবার্ষিকী অনুষ্ঠানে যেতে বলেছিল। কিন্তু আমি দাঁত ব্যথার ফলে অসুস্থ থাকায় আমি যেতে পারেনি। তাছাড়া আমি সকালে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। পরে অনেকবার ফোন করার পর বিকেলে আমি সেখানে (সাবেক স্বতন্ত্র এমপির প্রোগ্রাম) যাই। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমার উপর ক্ষুব্ধ হয়। পরে ফোনে আমাকে গালমন্দসহ মারধোরের হুমকি দেন। পরবর্তীতে তারা আমার উপর হামলা চালায়।’
সোহেল রানা আরও বলেন, ‘আমি ভুল বা অন্যায় করলে আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যাবস্থা নিতে পারতো। ডেকে নিয়ে শাসন করতে পারতো। কিন্তু হামলা কেনো?’
গালমন্দ ও হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব হারুনুর রশীদ খান বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতিকে ছাত্রলীগ করতে হবে। সাবেক স্বতন্ত্র এমপির মিটিং করবে আওয়ামী লীগের মিটিং করবে না, তা হবে না। যে ছাত্রলীগ নৌকার নির্বাচন করে না, যে ছাত্রলীগ আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে কাজ করে না, শুধুমাত্র ডলারের জন্য কাজ করবে, এমন ছাত্রলীগ সভাপতির দরকার নেই। আমি এই কথা বলেছি। তারা ছাত্রলীগের কলঙ্ক।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বস্তাবায়নের জন্য ছাত্রলীগ। আমার বা এমপি বা সাবেক এমপির গুণগান করার জন্য ছাত্রলীগ না। ছাত্রলীগকে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার কথা বলতে হবে। সে আওয়ামী লীগের দলীয় মিটিং-এ আসে না, কিন্তু সাবেক স্বতস্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার মিটিং করে। এটা মানা হবে না।’
হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নারী ও অর্থ যেখানে, দ্বন্দ্বও সেখানে। এসব নিয়ে তার উপর হামলা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম ভূঞা রাখিল বলেন, ‘শিবপুর আওয়ামী লীগের অভিভাবক হলেন আলহাজ্ব হারুনুর রশীদ খান। তিনি দলীয় কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য সোহেল রানাকে বলেছেন। সে দলীয় কর্মসূচিতে না গিয়ে বিকেলে সাবেক স্বতন্ত্র এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লার ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে গিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। হারুনুর রশীদ খান একজন অভিভাবক হিসেবে আমাদেরকে শাসন করতেই পারেন। তবে সোহেল রানা যে ফোনালাপ ফেসবুকে ভাইরাল করেছে, তা এডিট করে ছাড়ানো হয়েছে বলে আমি মনে করি। সোহেল রানা কখনো ছাত্রলীগ করেনি। রাতের আঁধারে এই কমিটি করা হয়েছে। শিগগিরই এই অনিয়মিত কমিটির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
Leave a Reply