মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু, নরসিংদী
মৌসুমি ফল বাঙ্গি। অতি গরমে অতিষ্ট প্রাণ, খুঁজে একটু স্বস্তির সেই সময় একটু বাঙ্গি প্রাণে এনে দেয় প্রশান্তি। দূর করে শরীরের ক্লান্তি। গ্রীষ্মের অন্যতম ফলগুলোর মধ্যে বাঙ্গি একটি অন্যতম ফল। গ্রীষ্ম আসার আগেই নরসিংদীর চরাঞ্চলের মাঠে শোভা পাচ্ছে বাঙ্গি। ইতোমধ্যে বাঙ্গি চাষে প্রসিদ্ধ হয়ে উঠছে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চল। এ অঞ্চলের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয়েছে। অল্প শ্রম ও অল্প খরচে অধিক লাভবান হওয়ায় প্রতি বছরই চরাঞ্চলে বাড়ছে বাঙ্গির চাষ। ফলে এ অঞ্চলে সৃষ্টি হচ্ছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার চারটি চর ইউনিয়নে বাঙ্গি চাষাবাদ হয়। ইউনিয়নগুলো হল, বাঁশগাড়ি, শ্রীনগর, চরমধূয়া ও মির্জাচর। তবে বাঁশগাড়ি ইউনিয়নেই সবচেয়ে বেশী বাঙ্গির আবাদ হয়। চলতি বাঙ্গি মৌসুমে রায়পুরার চরাঞ্চলে মোট ৪০ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। গত বছর রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের ৩৬ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষ করা হয়েছিল । সে অনুযায়ি এ বছর ৪ হেক্টর জমিতে বেশী বাঙ্গি চাষ হয়। এ বছর বাঙ্গি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১৮/২০ মেট্রিক টন।
বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের মধ্যনগর ও চান্দেরকান্দি গ্রামের কৃষকরা তাদের জমিতে বানিজ্যিকভাবে বাঙ্গি চাষ করে। শুধু মধ্যনগর বা চান্দেরকান্দি নয় বর্তমানে আশপাশের বেশ কয়েকটি চরে বাঙ্গির আবাদ হচ্ছে। এই সকল চরের উৎপাদিত বাঙ্গির আকার বড় ও রং উজ্জ্বল হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মেঘনা নদীর তীর ঘেঁষে বাঁশগাড়ি ও শ্রীনগর ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল চর। বিস্তৃর্ণ চরের ধান ও মসলা জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির উপর ছড়িয়ে রয়েছে বাঙ্গিগাছের সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারী ক্রেতারা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। দুই পক্ষের দর কষাকষিতে চলেছে বেচাকেনা।
আমেনা বেগম নামে এক মহিলা কৃষক বলেন, ‘আগে নিজেরা খাওনের জন্য অল্প জমিতে বাঙ্গি করতাম। কিন্তু কয়েক বছর ধইরা বিভিন্ন জায়গার পাইকাররা চর থাইক্যা বাঙ্গি কিনা শুরু করে। গৃহস্থরা ভালা লাভ পাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপকভাবে বাঙ্গির চাষ করতে থাকে। এখনতো আমাগো চরের অর্ধেক জমিতেই বাঙ্গি চাষ হয়।’
বাঙ্গি চাষি মামুন মিয়া বলেন, ‘বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ লাগে না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে করি। রসুনের জন্য সার দেয়ায় বাঙ্গির জন্য আলাদা করে সার লাগেনা। বীজ ও ঔষুধেই যা খরচ। এ বছর দুই কানি জমিতে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি সব মিলাইয়া আড়াই লাখ টাকা বেচতে পারমু।’
বাঙ্গি চাষ শুধু কৃষকদের সমৃদ্ধি আনেনি সৃষ্টি হয়েছে মৌসুমী কর্মসংস্থানের। বিশাল চরের বাঙ্গির জমি থেকে নৌকা ঘাটের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। অপর দিকে টানের দুরত্বও এক থেকে দেড় কিলোমিটার।. মৌসুমী শ্রমিকরা জমি থেকে বাঙ্গি ঝুঁড়িতে তুলে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নৌকা কিংবা ভ্যানে ভর্তি করে। এতে পুরো চরে চোখে পড়ে কৃষক ও শ্রমিকের ব্যাপক কর্মচঞ্চলতা।
চান্দেরকান্দি গ্রামের আমির হোসেন বলেন, ‘বাঙ্গির পুরা মৌসুমে এই গ্রামের কেউ বইস্যা থাহে না। সবাই কিছু না কিছু করে। জমি থাইক্যা একটা পাথি বাঙ্গি ঘাটে বা টানে নিলে আসলে বাঙ্গিপ্রতি ৫ টাকা পাই। একে পাথিতে ১০ থেকে ১৫ টা বাঙ্গি ধরে। এতে প্রতিদিন আমরা ৮শ থেকে এক হাজার টাকা মজুরি হয়।
চরে পাইকারী বাঙ্গি বিক্রি হয় শতক হিসেবে। আকার ভেদে প্রতি’শ বাঙ্গি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকায় পাইকারী বিক্রি হচ্ছে। জমি থেকে বাঙ্গি কিনছিলেন নরসিংদী মাধবদী থেকে আসা পাইকারী ফল ব্যবসায়ী আব্দুল ছাত্তার, জয়নার আবেদীন, ব্রাহ্মনবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থেকে হোসেন আলী ও রায়পুরা থেকে রফিকুল ইসলাম। তাঁরা জানায়, মধ্য নগরের বাঙ্গি আকারে বড়, দেখতে সুন্দর ও খেতে সুস্বাদু।
রায়পুরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বনি আমিন খান বলেন, রায়পুরার চরাঞ্চলে বাঙ্গি চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। বাঙ্গি চাষ সম্প্রসারণে আমরা সার্বক্ষনিক মাঠ পরিদর্শনসহ কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বীজ কৃষকরা ব্যবহার করে। বাঙ্গি চাষে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও ভাল বীজ সরবরাহের পরিকল্পনা রয়েছে কৃষি বিভাগের।
Leave a Reply