নিজস্ব প্রতিবেদক
আজ চলতি পবিত্র মাহে রমজান মাসের শেষ শুক্রবার। শুধু তাই নয় আজ ১৪৪২ হিজরির শেষ জুমাবারও। এই দিনটি মুসলিম বিশ্বের কাছে জুমাতুল বিদা নামে পরিচিত। মূলত জুমাতুল বিদার মধ্য দিয়ে মাহে রমজানকে বিদায় জানানো হয়। । এই দিনকে কেন্দ্র করে আজকের জুমাতুল বিদায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে মানবজাতিকে করোনা থেকে মুক্তির প্রত্যাশা জানিয়ে বিশেষ মোনাজাত করা হয়েছে।
দোয়ায় দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করে করা হয়। বায়তুল মোকাররমে নামাজে ইমামতি করেন মুফতি মিজানুর রহমান। নামাজ শেষে মোনাজাতে বসে তিনি বলেন, ‘সারা মানবজাতি আজ করোনা মহামারির কবলে। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে একমাত্র আল্লাহ আমাদেরকে বাঁচাতে পারেন। তিনি যদি আমাদেরকে না বাঁচান, তাহলে আমাদের বাঁচানোর মতো কেউ নেই। আমরা তোমার (আল্লাহ) দরবারে হাত তুলেছি মাওলা। তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও। করোনা থেকে রক্ষা কর। এভাবে চলতে থাকলে আমরা সবাই একে একে মারা যাব। তুমিই তোমার বান্দাদের রক্ষা কর।’
মোনাজাতে আরও বলেন, ‘পবিত্র রমজানে আমরা তোমার দরবারে হাত তুলেছি। তুমি সারা বিশ্বের সব মানুষকে ক্ষমা করে দাও। মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা করছি মাবুদ। তুমি আমাদের মতো পাপী বান্দাদের ক্ষমা করে দাও।’
বিশেষ এই দিনে মুফতি মিজানুর রহমানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে ফরিয়াদ জানানো মুসল্লিরা বেলা সাড়ে ১১টার পর থেকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আসতে শুরু করেন। জুমাতুল বিদার ফরজ নামাজ চলাকালেও অনেকে মসজিদে নামাজের জন্য আসেন। এত বেশি মানুষ আজ উপস্থিত হয়েছিল যে, বিশাল মসজিদের ভেতরেও জায়গা হয়নি সবার। ফলে মসজিদের বাইরে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করতে হয়েছে অনেককে।
জুমার যখন ফরজ নামাজ পড়ানো হচ্ছিল, তখন বাইরে প্রচণ্ড রোদ। কড়া রোদ উপেক্ষা করে বায়তুল মোকাররমের মসজিদের সিঁড়িতে ও নিচে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন। মসজিদের বাইরের অংশে গরম কংক্রিটের ঢালাইয়ের ওপর দাঁড়িয়েও মানুষ নামাজ পড়েছেন।
আলী হোসেন নামের এক মুসুল্লি বলেন, ‘ভীষণ গরম। বসা যাচ্ছিল না। নামাজে দাঁড়ানোর আগে মনে হয়েছি নামাজ হয়তো আদায় করতে পারবোানা।কিন্তু নামাজে দাঁড়ানোর পর মনে হল, সময় দ্রুতই চলে গেল। এটাই হয়তো আল্লাহুর পরীক্ষা।
বায়তুল মোকাররমের চারদিকে আজ প্রচুর ভিক্ষুক দেখা গেছে। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন ভিক্ষুকের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। সবিরুদ্দিন নামের এক ভিক্ষুক বলেন, ‘আজকের এই দিনে মানুষ ভালো (বেশি) টাকা দেয়। অন্য যেকোনো শুক্রবারের চেয়েও আজ বেশি মানুষ টাকা দিছে। প্রতি শুক্রবার এখানে থাকি আমি। আজ সব দিনের চেয়ে বেশি টাকা হয়েছে।’
পাশে বসা ইয়াকুব নামের আরেকজন ভিক্ষুক বলেন, ‘আজকের টাকা দিয়ে ছেলের জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে দেব। একটা মেয়ে আছে৷ তার জন্যও জামা-কাপড় কিনব।’
মসজিদের দুপাশের গেটে বেশ কয়েকজন জায়নামাজ বিক্রি করছিলেন। রফিকুল ইসলাম নামের এক বিক্রেতা বলেন, ‘অনেক বিক্রি করছি আজ। মানুষ নামাজ পড়তে এসে কেনে। প্রতি শুক্রবারেই এখানে বিক্রি হয়, তবে আজ বেশি হয়েছে। শেষ সময়ে মানুষকে যখন রোদে নামাজ পড়তে হয়েছে, তখন অনেকেই কিনেছে। দাম মাত্র ১০০ টাকা।
Leave a Reply