মো: শাহাদাৎ হোসেন রাজু
নরসিংদীর নরসিংদী ও মাধবদী পৌরসভার নতুন মেয়র কারা হচ্ছেন জানতে অপেক্ষা করতে হবে আরো একটি রাত। রাত পেরিয়ে ভোর হলেই শুরু হবে নরসিংদীর এই দুই পৌরসভায় নির্বাচন। রবিবার সকাল ৮ থেকে শুরু হয়ে একটানা চলবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত। চতুর্থ ধাপে আগামীকাল (১৪ ফেব্রুয়ারী) অনুষ্ঠিত হবে নরসিংদীর এই পৌরসভার নির্বাচন।
ইতিমধ্যে প্রচার প্রচারণা শেষ করেছেন প্রার্থীরা । নির্বাচন শুরু হতে আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকি। শুক্রবার পর্যন্ত কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বার ঘুরে ভোট প্রার্থণা করছেন। দিয়েছেন উন্নয়নের নানা প্রতিশ্রুতি। চেষ্টা করেছেন ভোটারদের মন জয় করার।
এখন শুধু হিসাব নিকাশ। সকল পক্ষই তাদের হিসাবের খাতা নিয়ে ভোটের হিসাব কষছে আর কাটাকাটি করছে। আবার কেউবা নির্বাচনে ভোট গ্যামলিং এর আশংকাও করছে। সকল জল্পনা-কল্পনার মুখে ছাই ছিটিয়ে সুন্দর, গ্রহণযোগ্য ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করার সকল প্রস্তুতিও শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন।
সকল প্রার্থীই সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। মাধবদী পৌরসভায় তেমন একটা না থাকলেও নরসিংদীতে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণায় বাধা দেওয়ারও অভিযোগ এনেছেন। আগামীকাল রবিবার সকাল ৮ টা থেকে একযোগে দুটি পৌরসভাতেই ভোট গ্রহণ শুরু হবে। ভোটগ্রহণ চলবে একটানা বিকেল ৪ টা পর্যন্ত। এর মধ্যে নরসিংদী পৌরসভায় ব্যালট পেপার এবং মাধবদী পৌরসভায় ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে নরসিংদীর দুটি পৌরসভায় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। সুষ্ঠ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তিন স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে এবারের পৌরসভার ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করবেন।
এদিকে গতকাল (১২ ফেব্রুয়ারী) মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা। ঘন-কুয়াশা ও তীব্র শীতকে উপেক্ষা করে প্রার্থীরা চালিয়েছেন তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণা। নানা প্রতিশ্রুতির পসরা সাজিয়ে ভোটারদের দ্বারে ঘুরে ঘুরে ভোট প্রার্থনা করেছে প্রার্থীরা , অঙ্গীকার করছেন একটি উন্নত, পরিচ্ছন্ন, মাদকমুক্ত, দুর্নীতিমুক্ত আধুনিক ডিজিটাল পৌরসভা উপহার দেবার।
নরসিংদী পৌরসভা
পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নরসিংদী পৌরসভা বাসীর মধ্য এখন বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। সকলের চোখে মুখে উচ্ছ্বাসের সঙ্গে একটাই প্রশ্ন নির্বাচিত মেয়র পারবেত’ত তাঁদের প্রত্যাশা পুরন করে একটি উন্নত,পরিচ্ছন্ন ও আধুনিক পৌরসভা গড়তে? সেই কারণে নরসিংদী পৌরবাসী এমন একজন সৎ ও কর্মঠ মেয়র প্রত্যাশা করেন যিনি পৌরসভার উন্নয়নে অভূতপূর্ব অবদান রাখবেন।
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য নরসিংদী পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ৪ জন, ৩ টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ১০ জন ও ৯ টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪২ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছে। মেয়র পদে প্রার্থী হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত আমজাদ হোসেন বাচ্চু (নৌকা), বিএনপির হারুণ অর রশিদ (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশের মো: আসাদুল হক হামিদ (হাত পাখা) এবং আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী এস এম কাইয়ুম (মোবাইল ফোন)।
জেলা রিটার্ণিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নরসিংদী পৌরসভার নির্বাচনের এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৯৯ হাজার ৪৫৪। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ১৫৭ এবং মহিলা ভোটার ৫০ হাজার ২২৭ জন। নির্বাচনে ৯ টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪০ টি ভোট কেন্দ্রের ২৭৮টি স্থায়ী এবং ৮ টি অস্থায়ী ভোটকক্ষে ভোট গ্রহন করা হবে। নির্বচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিবে নির্বাচন কমিশন।
নরসিংদী পৌরসভায় প্রতি কেন্দ্রে পুলিশের ৭ জন ও ৯ জন আনসার সদস্য থাকবেন। প্রতি দুটি কেন্দ্রে পুলিশের একটি মোবাইল টিম কাজ করবেন। এছাড়াও প্রতি ৪ থেকে ৫টি কেন্দ্র নিয়ে পুলিশের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে। এছাড়াও টহলরত থাকবে র্যাবের ৭২ সদস্যের ১২টি টিম, ১৫০ জন বিজিবি সদস্য, এদিকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ফোর্সকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদানে ৯টি কেন্দ্রে ১৮জন নির্বাহী ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া এবারে নরসিংদী পৌরসভায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে ভোটগ্রহণ শুরু হওয়ার আগে সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌছে দেওয়া হবে।
জেলা রিটার্ণিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) কমল কুমার ঘোষ জানান, ইতোমধ্যে সকল প্রকার প্রস্ততি সম্পন্ন করেছে জেলা নির্বাচন কমিশন। শনিবার সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রেগুলোতে ব্যালট পেপার ছাড়া অন্য সকল ধরনের সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল সকালে ভোটগ্রহনের আগে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌছে দেওয়া হবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ৪০ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ২৭৮ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ৫৫৬ জন পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন।
মাধবদী পৌরসভা
মাধবদী পৌরসভা নির্বাচনে এবারই প্রথম ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট হবে । এ নির্বাচনে মোট ৩২ হাজার ৪৮৩ জন ভোটার ১৫টি কেন্দ্রের ১০২টি কক্ষে ভোট প্রদান করবেন।
নির্বাচনে মেয়র পদে যে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তারা হলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মাধবদী শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক (নৌকা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) মনোনীত প্রার্থী মাধবদী শহর ছাত্রদলের সদ্য সাবেক আহবায়ক আনোয়ার হোসেন আনু (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত প্রার্থী মনির হোসেন শামীম (হাতপাখা) ও একমাত্র মহিলা স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদা ইয়াছমিন (মোবাইল ফোন) প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করছেন।
এছাড়া ১২ টি সাধারণ ওয়ার্ডে মোট ৩৩ জন প্রার্থী কাউন্সিলর এবং ৪ টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে মোট ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে সংরক্ষিত ২ নং (৪,৫ ও ৬) ওয়ার্ডে ফরিদা ইয়াছমিন নামে একজন মাত্র প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় নির্বাচিত হন।
জেলা রিটানিং কর্মকর্তা মো: মেজবাহ উদ্দিন জানান, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে ভোট কেন্দ্রেগুলোতে ইভিএম ইউনিটসহ সকল ধরনের সরঞ্জামাদি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ১৫ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা, ১০২ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা ও ২০৪ জন পোলিং এজেন্ট দায়িত্ব পালন করবেন।
মাধবদী পৌরসভায় প্রতি কেন্দ্রে পুলিশের ৭ জন ও ৮ জন আনসার সদস্য থাকবেন। পুলিশের ৮টি মোবাইল টিম কাজ করবেন। এছাড়াও ২টি পুলিশের উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করবে।
এছাড়াও টহলরত থাকবে ৩ প্লাটুন র্যাব ও ৩ প্লাটুন বিজিবি সদস্য, এদিকে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ফোর্সকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদানে ১২টি কেন্দ্রে ১২ জন নির্বাহী ও একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবে।
ইতিমধ্যে দুই পৌরসভায় নির্বাচনী সকল সরঞ্জাম নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রে পৌঁছেছেন। নির্বাচনী এলাকায় শনিবার মধ্যরাত থেকে সকল ধরণের যান চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণারোপ করা হয়েছে।
নরসিংদী পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম জানান, আগামীকাল পৌরসভা নির্বাচনে যে কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে পুলিশ সদস্যরা মাঠে থাকবেন। জেলার দুই পৌরসভার বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা বজায় রাখতে পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া আনসার, বিজিবি ও র্যাব সদস্যরাও নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত থাকবনে বলেও জানান তিনি।
|
Leave a Reply